মরা খালে পরিণত হচ্ছে পঞ্চগড়ের সব নদনদী

সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের আয়তন মাত্র ১ হাজার ৪০৪ দশমিক ৬৩ বর্গ কিলোমিটার। এই ছোট জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় ৪৬টি নদনদী। এসব নদীর অধিকাংশের উৎসমুখ প্রতিবেশী ভারতে। এককালে এসব নদী ছিল প্রমত্তা। পাহাড় থেকে নেমে আসায় খরস্রোতা এসব নদীতে নিয়মিতভাবে চলাচল করত ছোট-বড় অনেক নৌকা। জেলার প্রধানতম নদী করতোয়া। এই নদী ঘিরেই গড়ে উঠেছিল পঞ্চগড় শহর। বেশি দিনের কথা নয়; ১০০ বছর আগেও এই নদীতে চলাচল করত বড় বড় নৌকা। ব্যাপারীরা বড় বড় নৌকায় করে তাদের সওদা নিয়ে ভিড়ত এই ঘাটে। নদীকে ঘিরেই প্রাণচাঞ্চল্য ছিল পঞ্চগড়। বিশেষ করে এই নদীকে নিয়েই ঘুরপাক খেত পঞ্চগড়ের অর্থনীতি।
কিন্তু কালের বিবর্তনে করতোয়ার এখন মরণ দশা। শুধু বর্ষাকালে দেখলে মনে হয় এটি করতোয়া নদী। আর শীত শুরুর আগেই প্রমত্তা করতোয়া হয়ে পড়ে শীর্ণকায় মরা খালে। এখন বাইরে থেকে আসা লোকজন সেতুর নিচে তাকালে ভাবতেই পারবে না এটা এক কালের খরস্রোতা করতোয়া নদী। নদীতে এখন পানির দেখা পাওয়াই ভার। যেদিকে চোখ যাবে, দেখা যায় শুধুই বালুচর। বোরো মৌসুমে নদীর বুকে সবুজের সমারোহ। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা ধানের আবাদ করে পুরো নদীর বুক জুড়ে।
শুধু করতোয়াই নয়; পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদীই এখন শীর্ণকায় মরা খাল। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দুই তীরে শুধুই ধু-ধু বালুচর। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে করতোয়া, চাওয়াই, তালমা, পাঙ্গা, পাম, মহানন্দা, ভেরসা, ডাহুক, তীরনই, রণচন্ডি, বেরং, জোড়াপানি, সাও, ঘোড়ামারা, পাথরাজ, নাগর, সিঙ্গিয়া, বহু, রসেয়া, ঘাগরা, মরাতিস্তাসহ উজান থেকে নেমে আসা এসব নদীর এই দৈন্য দশা। প্রতিবেশী ভারত এসব নদীর উৎসমুখে একতরফা বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণ করায় বর্ষার পরই এসব নদী পরিণত হচ্ছে মরা খালে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদী শাসন আইন অমান্য করে নদীগুলোর উৎস এবং প্রবেশমুখে বাঁধ, স্লুইস গেট, জলাধার, ফিডার ক্যানেল ও রেগুলেটর নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন এবং জেলার ২২১ কিলোমিটার সীমান্তব্যাপী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে নদীগুলো ধীরে ধীরে মরা খালে পরিণত হচ্ছে।
মরা খালে পরিণত হচ্ছে পঞ্চগড়ের সব নদনদী

সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের আয়তন মাত্র ১ হাজার ৪০৪ দশমিক ৬৩ বর্গ কিলোমিটার। এই ছোট জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় ৪৬টি নদনদী। এসব নদীর অধিকাংশের উৎসমুখ প্রতিবেশী ভারতে। এককালে এসব নদী ছিল প্রমত্তা। পাহাড় থেকে নেমে আসায় খরস্রোতা এসব নদীতে নিয়মিতভাবে চলাচল করত ছোট-বড় অনেক নৌকা। জেলার প্রধানতম নদী করতোয়া। এই নদী ঘিরেই গড়ে উঠেছিল পঞ্চগড় শহর। বেশি দিনের কথা নয়; ১০০ বছর আগেও এই নদীতে চলাচল করত বড় বড় নৌকা। ব্যাপারীরা বড় বড় নৌকায় করে তাদের সওদা নিয়ে ভিড়ত এই ঘাটে। নদীকে ঘিরেই প্রাণচাঞ্চল্য ছিল পঞ্চগড়। বিশেষ করে এই নদীকে নিয়েই ঘুরপাক খেত পঞ্চগড়ের অর্থনীতি।
কিন্তু কালের বিবর্তনে করতোয়ার এখন মরণ দশা। শুধু বর্ষাকালে দেখলে মনে হয় এটি করতোয়া নদী। আর শীত শুরুর আগেই প্রমত্তা করতোয়া হয়ে পড়ে শীর্ণকায় মরা খালে। এখন বাইরে থেকে আসা লোকজন সেতুর নিচে তাকালে ভাবতেই পারবে না এটা এক কালের খরস্রোতা করতোয়া নদী। নদীতে এখন পানির দেখা পাওয়াই ভার। যেদিকে চোখ যাবে, দেখা যায় শুধুই বালুচর। বোরো মৌসুমে নদীর বুকে সবুজের সমারোহ। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা ধানের আবাদ করে পুরো নদীর বুক জুড়ে।
শুধু করতোয়াই নয়; পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদীই এখন শীর্ণকায় মরা খাল। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দুই তীরে শুধুই ধু-ধু বালুচর। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে করতোয়া, চাওয়াই, তালমা, পাঙ্গা, পাম, মহানন্দা, ভেরসা, ডাহুক, তীরনই, রণচন্ডি, বেরং, জোড়াপানি, সাও, ঘোড়ামারা, পাথরাজ, নাগর, সিঙ্গিয়া, বহু, রসেয়া, ঘাগরা, মরাতিস্তাসহ উজান থেকে নেমে আসা এসব নদীর এই দৈন্য দশা। প্রতিবেশী ভারত এসব নদীর উৎসমুখে একতরফা বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণ করায় বর্ষার পরই এসব নদী পরিণত হচ্ছে মরা খালে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদী শাসন আইন অমান্য করে নদীগুলোর উৎস এবং প্রবেশমুখে বাঁধ, স্লুইস গেট, জলাধার, ফিডার ক্যানেল ও রেগুলেটর নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন এবং জেলার ২২১ কিলোমিটার সীমান্তব্যাপী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে নদীগুলো ধীরে ধীরে মরা খালে পরিণত হচ্ছে।
আবার নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানিও অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। অথচ শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি পঞ্চগড় জেলার সেচের একমাত্র অবলম্বন। ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ইরি-বোরো চাষে স্থানীয় চাষিরা সেচ দেয়ার পরও সেচের পানি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এদিকে নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
ইতোমধ্যে এসব নদীর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি নদী ও একটি খাল পুনর্খননের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন’ প্রকল্পে পঞ্চগড়ের করতোয়া, ভেরসা, চাওয়াই, পাথরাজ ও বুড়িতিস্তা নদী এবং আটোয়ারী উপজেলার বড় সিংগীয়া খান পুনর্খনন কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় করতোয়া নদীর ৭৮ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়ার ভেরসা নদীর ১০ কিলোমিটার, সদরের চাওয়াই নদীর ২০ কিলোমিটার, বোদার পাথরাজ নদীর ৩০ কিলোমিটার এবং দেবীগঞ্জের বুড়িতিস্তা নদীর ২০ কিলোমিটার ও আটোয়ারীর বড় সিংগীয়া খালের ৬ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। কিন্তু অনিয়মের কারণে এই প্রকল্পের কোনো সুফল আসেনি বলে জানিয়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ইতোমধ্যে এসব কাজের ১৬টি প্যাকেজের কাজ শেষের পথে। নতুন প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে বাকি নদী খননের কাজ শুরু করা হবে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া জানান, নদ-নদীগুলোর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাবে। এতে এলাকায় মরুকরণসহ কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
পরিবেশ প্রকৃতি এবং নদী গবেষণায় কাজ করছেন ভজনপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে নদী পুনর্খননের কাজ করতে না পারলে এর কোনো সুফল আসবে না। পঞ্চগড়ের ৩৪টি নদনদীর অধিকাংশই হুমকির মুখে। ক্রমাগত দখল-দূষণে মৃতপ্রায়।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ের নদ-নদীগুলোকে দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করে জমানো পানি সেচ কাজের অনুকূলে আনতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চগড়ের পরিবেশ প্রকৃতি বাঁচিয়ে রাখতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
0 Comments